জালাল উদ্দিন রুমি: জীবনের শিক্ষা

 একদিন জালালউদ্দিন রুমি একটি গভীর বনের মধ্য দিয়ে হাঁটছিলেন। হঠাৎ তিনি একটি বড় কালো তিতির পাখি ধরে ফেললেন। পাখিটিকে দেখে রুমি ভাবতে লাগলেন, কীভাবে এটি রান্না করবেন—আগুনে ঝলসে খাবেন, নাকি তরকারি বানাবেন? ঠিক তখনই পাখিটি কথা বলে উঠল, যা রুমির জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল।


পাখিটি বলল, “রুমি, তুমি তোমার জীবনে এত মাংস খেয়েছো, তবুও তোমার এই লোভ শেষ হয় না। যদি তুমি আমাকে মুক্ত করে দাও, আমি তোমাকে তিনটি মূল্যবান পরামর্শ দেব, যা তোমার জীবনকে শান্তি ও সন্তুষ্টিতে ভরিয়ে তুলবে।” রুমি কিছুটা অবাক হয়ে বললেন, “ঠিক আছে, তবে প্রথম পরামর্শটা আমার হাতেই বসে দাও। যদি তা আমার পছন্দ না হয়, সঙ্গে সঙ্গে তোমাকে হত্যা করব।” পাখিটি শান্তভাবে বলল, “তুমি সবসময় তোমার বন্ধুদের উদ্ভট কথাবার্তায় বিচলিত হয়ে পড়ো। তাদের নিজেদের মতো থাকতে দাও। এতে তোমার জীবন আরও সহজ এবং সুখী হবে।” রুমি কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন। পাখিটির কথায় যুক্তি আছে বলে মনে হলো। এরপর তিনি দ্বিতীয় পরামর্শের জন্য বললেন। পাখিটি বলল, “তুমি যদি আমাকে ছেড়ে দাও, আমি ওই গাছের ডালে বসে দ্বিতীয় পরামর্শটি দেব।” রুমি কিছুটা দ্বিধায় পড়লেও পাখিটিকে ছেড়ে দিলেন। পাখিটি উড়ে গিয়ে কাছের একটি গাছের ডালে বসে বলল, “রুমি, অতীতকে কখনোই পাল্টানো যায় না। তাই বর্তমান মুহূর্তকে উপভোগ করো এবং ভবিষ্যতের জন্য বাঁচো। তবে তুমি একটি বড় ভুল করেছো। আমার পেটে তিন কেজি হীরা আছে। যদি তুমি আমাকে না ছাড়তে, তাহলে তোমার তিন পুরুষ বসে খেতে পারত।” এ কথা শুনে রুমি ভীষণ রেগে গেলেন। তিনি পাখিটিকে ধরার জন্য ছুটতে লাগলেন। তখন পাখিটি জোরে জোরে বলল, “রুমি, তুমি আমার পরামর্শ একেবারেই শোনোনি। আমার ওজন যেখানে দুই কেজির বেশি নয়, সেখানে আমার পেটে কীভাবে তিন কেজি হীরা থাকতে পারে? তুমি এখনো উদ্ভট ও বোধহীন কথায় প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছো। আর দ্বিতীয়ত, আমি ইতোমধ্যেই তোমার হাত থেকে মুক্ত হয়েছি। আমি এখন তোমার জীবনের অতীত। অতীত নিয়ে পড়ে থাকার কোনো মানে নেই।” রুমি পুরোপুরি স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। তিনি তৃতীয় পরামর্শের জন্য পাখিটিকে অনুরোধ করলেন। পাখিটি এবার বলল, “রুমি, শোনো! সবাইকে উপদেশ দিতে যেও না। শুধু তাদের উপদেশ দাও, যারা তা শুনবে এবং মনে রাখবে। মনে রেখো, কিছু কাপড় এতটাই জীর্ণ হয়ে যায় যে, তা আর কখনো সেলাই করা যায় না।”


 এই গল্পটি আমাদের জীবনের একটি গভীর শিক্ষা দেয়। অতীত নিয়ে পড়ে থাকা, অযথা বিতর্কে জড়ানো এবং অযাচিত উপদেশ দেওয়া কখনোই আমাদের জীবনে শান্তি আনতে পারে না। বরং বর্তমানকে উপভোগ করা, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং শুধুমাত্র যোগ্য ব্যক্তিদের উপদেশ দেওয়া—এগুলোই আমাদের জীবনকে সুন্দর ও অর্থবহ করে তুলতে পারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post